স্বপ্নের ইউরোপে পাড়ি জমানোর আশায় ঋণ করে, জমি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেছিলেন তারা। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের বদলে প্রতারণার শিকার হয়ে এখন রাস্তায় ঘুরছেন তারা।
ঢাকার গুলশানে অবস্থিত প্রবাসী সেবা লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে টাকা হারিয়েছে অন্তত ১৬ যুবক। প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপের দেশ পর্তুগালে ওয়ার্ক পারমিটের মাধ্যমে পাঠানোর কথা বলে তাদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাছ থেকে ভিসার আবেদন, মেডিকেল পরীক্ষা ও ওয়ার্ক পারমিটের নামে মোট ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু তারা ইউরোপে যেতে পারেননি।
প্রতারিতদের একজন মোহাম্মদ সানাউল জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি প্রবাসী সেবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কানিজ ফাতেমার কাছে তিন লাখ টাকা দেন। প্রতিষ্ঠানের কথামতো গত আগস্টে তিনি ভারতের দিল্লিতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন তিনি।
তিনি বলেন, “দিল্লিতে গিয়ে দুই সপ্তাহের মতো হোটেলে বসেছিলাম। প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিনিধি কাগজপত্র নিয়ে আসেনি। একজন হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন। তিনি প্রতিদিনিই বলতেন, আর এক দিন থাকতে হবে।”
সানাউল বলেন, “এক সপ্তাহ বসে থেকে তাদের কোনো প্রতিনিধি না পেয়ে দেশে ফিরে আসি। পরে তাদের গুলশানের অফিসে গিয়ে দেখা করলে উল্টো আমাদের দোষারোপ করে ওই প্রতিষ্ঠান।”
চাঁদপুরের তোফায়েল আহমেদ নামের এক যুবকও পর্তুগালে যেতে কয়েক লাখ টাকা দিয়েছিলেন কানিজ ফাতেমাকে। তিনি বলেন, “৬ বছর মালয়েশিয়ায় কাজ করে দেশে ফিরেছেন। আশা ছিল নতুন করে ইউরোপের কোনো দেশে গিয়ে একটু বেশি রোজগার করবেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর জীবনে। সব মিলিয়ে তাঁর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে ঘোরাচ্ছে।”
ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে প্রবাসী সেবায় টাকা জমা দিয়েছিলেন ঢাকার এক যুবক। তিনি বলেন, “বাবার জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েও ফেরত পাইনি। বিদেশে যাব বলে চাকরিও ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখন পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।”
টাকা ফেরত না পেয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী গুলশান থানায় অভিযোগ করেন। এক মাস ধরে তদন্ত করেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাকিবুল আলম জানান, অভিযোগ নিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভুক্তভোগীরা যাতে টাকা ফেরত পান, সেই চেষ্টা চলছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী সেবা নামের প্রতিষ্ঠান কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি নয়, বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে গুলশানে কার্যালয় খুলে ইউরোপে পাঠানোর নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক ভিসা সেন্টার ভিএফএস গ্লোবালের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জাল কাগজ বানিয়েও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে প্রতিষ্ঠানটি।