চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদের বিরুদ্ধে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও পরিবহন থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে মাসে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এর মধ্যে ১১৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাসে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় ৭৭টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।
ওসির হয়ে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন পুলিশের চার সদস্য। তাঁদের নেতৃত্ব দেন উপপরিদর্শক (এসআই) নাছির উদ্দিন ভূঁইয়া।
সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা কারখানাগুলোতে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু অথবা আহতের ঘটনা ঘটলে, কোনো কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হলে এককালীন টাকা আদায়ের সুযোগ তৈরি হয়। অভিযোগ রয়েছে, জাহাজভাঙা কারখানায় মারা যাওয়া শ্রমিকের লাশ স্থানান্তরের আগে ওসিকে টাকা দিয়ে আসতে হয়। ঘটনা ভেদে পরিমাণ ২ থেকে ১০ লাখ টাকা।
সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় ৩০টি পুরোনো লোহা (স্ক্র্যাপ) বিক্রির দোকান ও কিছু মাছের আড়ত রয়েছে। লোহার দোকান থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলা হয়।
সীতাকুণ্ডের লিংক রোড থেকে সাগরপাড় এবং কালুশাহ সেতুর নিচে সাত থেকে আটটি চোরাই তেল বিক্রির অবৈধ দোকান রয়েছে। দোকানগুলো থেকে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলে পুলিশ।
সীতাকুণ্ড এলাকায় ৩০টির মতো ড্রাম তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখান থেকে ৪০ হাজার টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। ৭০টির মতো জাহাজের পুরোনো আসবাব বিক্রির দোকান থেকে নেওয়া হয় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে।
সীতাকুণ্ড এলাকার ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ লিংক রোড পর্যন্ত দেড় শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। অটোরিকশাপ্রতি মাসিক চাঁদা ৩০০ টাকা।
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীতে মাইক্রোবাস রাখার অবৈধ পার্কিং সুবিধা দিয়ে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা তোলে পুলিশ।
মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে গাড়ি থামিয়ে প্রকাশ্যে পুলিশ টাকা নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে:
ওসি তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ১৪ মাস ধরে সীতাকুণ্ড থানায় রয়েছেন। এ সময় শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো টাকা তোলেননি। কেউ তাঁর নামে টাকা তুললে সেই দায়দায়িত্ব তাঁর নয়।
শিল্পকারখানার মালিকেরা বলছেন, ওসিই লোক পাঠিয়ে টাকা তোলেন। এ ছাড়া পুলিশের নামে কেউ চাঁদা তুললে সেটা ঠেকানোর দায়িত্ব পুলিশেরই। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, চাঁদাবাজি বহুদিন ধরেই চলছে। শুধু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কারখানার মালিককে চাঁদা দিতে হয় না।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিক্রিয়া: দুদক চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিআইজি) মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, “ওসি তোফায়েল আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”