বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির বিস্তার উদ্বেগজনক। একসময় ঢাকাকেন্দ্রিক থাকলেও এখন এই সংস্কৃতি দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ছে।
র্যাব বলছে, কিশোর গ্যাংগুলোতে শুরুতেই সন্ত্রাসী ভাবমূর্তি ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা সন্ত্রাসী ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। বর্তমানে তারা নিজেদের মধ্যে কোন্দল, চাঁদাবাজি, এলাকার নিয়ন্ত্রণ ও মাদক সিন্ডিকেটে জড়িয়েছে।
২০২৩ সালে র্যাবের অভিযানে সারাদেশ থেকে কিশোর গ্যাংয়ের বিভিন্ন গ্রুপের ৩৪৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন অপরাধে কিশোর গ্যাংয়ের ১ হাজার ১২৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, কিশোর গ্যাংগুলো উঠতি বয়সীদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। তারা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দলবেঁধে চলাফেরা ও বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল শোডাউন দেয়। এছাড়া তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে খুন, ধর্ষণ, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধ করে।
২০১৭ সালে উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি প্রথম আলোচনায় আসে। পরে উত্তরা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় স্কুলছাত্র শুভসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। কিশোর গ্যাংয়ের অপসংস্কৃতি রোধে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির কারণ ও প্রতিকার
কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির বিস্তারের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা: অনেক ক্ষেত্রেই কিশোররা পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলার শিকার হয়। এতে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
- শিক্ষা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য: শিক্ষা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যও কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। যারা শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ে তারা সহজেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে পড়ে।
- সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়: অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক নেতা ও সন্ত্রাসীরা কিশোর গ্যাংগুলোকে ব্যবহার করে থাকে। এতে কিশোর গ্যাংগুলোর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়।
কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
- পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার ও সমাজের সকল সদস্যকে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
- শিক্ষা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ: শিক্ষা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
- সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ: সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে তারা কিশোর গ্যাংগুলোকে প্রশ্রয় দিতে না পারে।
কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি একটি বড় সামাজিক সমস্যা। এর সমাধানে সরকার, পরিবার ও সমাজের সকল সদস্যকে একযোগে কাজ করতে হবে।